আজকে আমি আরেকটা টিউটোরিয়াল নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে শেয়ার বাজারের উপর। আজকের বিষয় হলো কেন বেশিরভাগ লোকেরা শেয়ারবাজারে লোকসান করে ?
শেয়ার বাজারে কিন্তু প্রচুর লোক প্রচুর টাকা লোকসান করে এবং এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এবং শেয়ার বাজার নিয়ে এই কারণে সাধারণ লোকের মনে একটা ভীতি কাজ করে। ওরে বাবা …শেয়ারবাজার ওখানে প্রচুর রিস্ক… ওখানে যাব না… ওখানে গেলেই টাকা লোকসান হবে ।
অধিকাংশ মানুষের মনে যারা শেয়ার বাজার সম্পর্কে সেভাবে কিছু জানেন না তাদের মনে কিন্তু একটা ভীতি আছে শেয়ার বাজার নিয়ে। এবং সত্যি কথা বলতে জনমানসের ৫০% লোকের মধ্যেই আছে । যেহেতু আমি শেয়ার বাজার সংক্রান্ত শিক্ষকতার সাথে যুক্ত, শেয়ার ট্রেডিং শেখাই, সেহেতু প্রচুর লোক আমাকে ফোন করেন এবং যারা ফোন করেন তাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু শিখবেন মনে করেন প্রচুর টাকা লোকসান করার পরে । এবং বেশির ভাগই কিন্তু প্রচুর লোকসান করে আসেন ।
আবার অনেকে আছেন যারা শেয়ারবাজারে নামার আগে ভালোভাবে শিখে নামতে চান এটা একটা গোষ্ঠী এবং এদের সংখ্যাটা কিন্তু অপেক্ষাকৃত অল্প । কিছু না জেনে অনেকেই আছেন, বন্ধু-বান্ধবদের কথায় এবং টাকার নেশায় লগ্নি করেন এবং প্রচুর টাকা ইনভেস্ট করেন এবং দেখা যায় তারা পরবর্তীকালে প্রচুর টাকা লোকসান খেয়েছেন।
এই শেয়ারবাজারে কেন এবং কিভাবে ও কি কি কারনে লোকেরা লোকসান করে সেটা আমি বিশদে এই টিউটরিয়ালে আলোচনা করেছি যেটা আপনারা বুঝতে পারবেন সহজেই।
Reasons of Losing Money in Share Market
বেশিরভাগ লোকেরই ধারণা, শেয়ার বাজারে এলেই টাকা পাওয়া যাবে। যেন, শেয়ার বাজারে কোথাও টাকা রাখা আছে, এলেই টাকা পাওয়া যাবে। অনেকটা ফিক্সড ডিপোজিট এর মতো । এমনকি অনেকে ফোন করে জিজ্ঞেসও করেন, দাদা… শেয়ার বাজারে যে টাকা পাওয়া যাবে এমন কোনো কি গ্যারান্টি আছে? আপনি কি এমন কিছু বলতে পারেন যাতে গ্যারান্টেড রিটার্ন হয়? বেশি চাইছি না জাস্ট ১০% পেলেই হবে তবে গ্যারান্টি চাই ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে শেয়ারবাজারের কোন গ্যারান্টি নেই এবং গ্যারান্টি জিনিসটা exist করে না এবং যারা গ্যারান্টি দেন, তারাও ঠিক কাজ করেন না । কারণ গ্যারান্টি জিনিসটা শেয়ার বাজারে দেওয়া চলে না ।
শেয়ার বাজারে শিখবো আবার কি ?
আরেক শ্রেণীর লোক আছে যারা ভাবে শেয়ার বাজারে কিছু শেখার দরকার নেই । শেয়ার ট্রেডিং মানে কি? আপনাকে শেয়ার কিনতে হবে, শেয়ার বেচতে হবে, মানে কেনাবেচা করার ব্যাপার। সেটা শেয়ার হোক বা কারেন্সী, কমোডিটি বা ফিউচার অপশন contract হোক। সবই তো কেনাবেচা করার ব্যাপার ।
তাই আমি শেয়ারের মধ্যে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রাখছি । ধরে নিই আমরা শেয়ার কেনাবেচা করছি । কারণ বেশিরভাগ লোক শেয়ার ব্যাপারটাই বোঝেন, কারেন্সি কমোডিটি এসব ব্যাপার বোঝেন না, ফিউচার অপশন বোঝেন না।
অনেকেই ভাবেন যে – শেয়ারবাজারে তো কিনব বেচবো, শিখতে যাবো কেন? জানার কি আছে? শেয়ার কিনবো, তারপর দাম বাড়বে… বেচে দেবো।
সস্তার তিন অবস্থা
আরেকটা ক্যাটাগরির লোক আছেন, যারা শেয়ারের দাম নিয়ে বেশি ভাবিত। কোম্পানির অবস্থা কেমন চলছে তা দেখার দরকার নেই, দামটা অনেক কম পাচ্ছেন, কেবল এটাই বিবেচ্য ।
মানে ধরুন কোনো কোম্পানির শেয়ারের আগে দাম ছিল অনেক টাকা । দামটা এখন অনেক কমে গেছে, যেমন ধরুন ইয়েস ব্যাংক। আগে প্রচুর দাম ছিল, আর এখন দাম অনেক কমে গেছে। অনেক কম দামে পাচ্ছি শেয়ারটা। অতএব কিনে ফেলি । দামটা হচ্ছে এঁদের কাছে একমাত্র বিবেচ্য ব্যাপার। অথচ কোম্পানিটা কি অবস্থায় আছে, কোম্পানির শেয়ারের দামটা কেন পড়ছে, সেটা কিন্তু অনেকেই ভাবেন না। শুধু দাম দেখে কিনে ফেলছেন এবং এই করতে গিয়ে কিন্তু বহু লোক বহু টাকা লোকসান করেন ।
BULLS TRAP
আবার অনেকে আছেন যখন শেয়ারের দাম বাড়ছে তখন কোন দামে শেয়ারটা কিনছেন খেয়াল নেই, শুধু হুজুগের বশে – শেয়ারের দাম বাড়ছে বলে কিনে ফেললেন। ফলে, কোন শেয়ার অত্যন্ত বেশি টাকায় কেনা হয়ে গেল । একে বলা হয় BULLS TRAP, অনেক সময় হয় কি, শেয়ারটা অনেক বেশি দামে কিনে ফেলায়, সেটা আটকে থেকে গেল। কোন দামে শেয়ার কিনেছেন তার হুঁশ নেই, একদম সর্বোচ্চ দামে কিনে ফেলেছেন । এবং তারপর দেখা যায় শেয়ারের দাম আস্তে আস্তে পড়ে গেল ।
শেয়ারবাজারে তো সবসময়ই দাম ওঠে ও পড়ে, ফলে শেয়ারের দাম যখন অনেকটা পড়ে যায়, তখন লোকেদের মনে হতাশা বাড়তে থাকে। তখন খালি মনে হতে থাকে যে দামটা এত পড়ে গেছে… আমি কোথায় কিনেছি !! সে তখন কি করবে তাই নিয়ে একটা প্যানিক তৈরি হয়।
ব্রোকিং ফার্মের খপ্পরে পড়ে লোকসান
এবারে যে ব্রোকার-এর কাছে, যে ব্রোকিং ফার্মে আপনি একাউন্ট খুলেছেন তাদের খপ্পরে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ কিভাবে লোকসান করেন সেটা বলি। প্রথমে শেয়ার বাজারে আপনি একটা একাউন্ট খুললেন এবং সেখানে কিছু টাকা ডিপোজিট করলেন। এবং তারপর থেকেই ব্রোকিং ফার্মের ছেলেরা আপনাকে সমানে ফোন করতে থাকে। বলতে থাকে- স্যার এই শেয়ারটা কিনুন, এই শেয়ারটা খুব বাড়বে… এই শেয়ারটা খুব ভালো…অনেক বাড়বে। এরকম সব গল্পের ফানুস ওড়াতে থাকে।
বেশিরভাগ লোকই যারা অ্যাকাউন্ট প্রথমবার খুলছেন, তাঁদের সেরকম ধারণা থাকে না শেয়ার সম্বন্ধে। তাঁরা অনেকসময় বুঝতেই পারেননা, কি করবেন এবং তাঁরা এসব গল্পগুলো শুনে বিশ্বাস করে ফেলে শেয়ার কিনে ফেলেন এবং বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় কেনার পরে কিছুদিন হয়তো দামটা বাড়লো, তারপরে দাম একদম তলিয়ে গেল।
ব্রোকিং ফার্মের উদ্দেশ্য
এখানে একটা জিনিস সবসময় মনে রাখবেন, ব্রোকিং ফার্মের উদ্দেশ্য কি ? ব্রোকিং ফার্ম আপনার শেয়ার কেনাবেচার উপরে ব্রোকারেজ পায়, এই তাদের মূল পাওনা। আপনি যত শেয়ার কেনাবেচা করবেন ততই তাদের ভালো। আপনি যদি বছরে একবার কি দুবার শেয়ার কেনেন, তাহলে কিন্তু তারা খব একটা খুশি হবে না।
আপনাকে প্রফিট দেওয়া কিন্তু ব্রোকিং ফার্মের উদ্দেশ্য নয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো ব্রোকারেজ ঘরে তোলা, এটাই তাদের টার্গেট এবং তাদের এই টার্গেটটা পূর্ণ করার জন্য তারা আপনাকে দিয়ে খুব বেশি মাত্রায় শেয়ার কেনাবেচা করাবে ও এজন্য তাদের যেসব ছেলেরা আছে, যারা আপনাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়, তারা ফোন করে বলবে এই শেয়ারটা কিনুন, ওই শেয়ারটা ভালো। এইসব বলে তারা আপনাদের উদ্বুদ্ধ করে যাবে যতক্ষণ না আপনারা কেনাকাটি করছেন ।
কিন্তু আপনারা যখন ফেঁসে যাবেন, আপনার টাকা যখন আটকে যাবে, তখন কিন্তু তারা কেউ দায় নেবে না। যতক্ষণ আপনি না কিনছেন, ততক্ষণই তারা বলবে। তারপর কিন্তু তারা কিছু বলবে না, আপনি যখন লোকসান খাচ্ছেন, তখন তারা কিন্তু আর কিছু বলবে না, ফোন ধরবে না , চিনতেও পারবে না।
ব্রোকিং ফার্মের কিন্তু আপনার টাকার ওপর কোনো দায় নেই, টাকার ওপর কোন মায়াও নেই এবং আপনার টাকা বাড়াতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা বা দায়িত্বও নেই তাদের। এটা মনে রাখবেন টাকা আপনার, আপনি ইনভেস্ট করেছেন, আপনার দায়। আপনি কেনাবেচা করবেন ও ব্রোকিং ফার্ম ব্রোকারেজ নিয়ে চলে যাবে, এটাই তাদের উদ্দেশ্য এবং এটাই তাদের পাওনা। অতএব তারা কিন্তু আপনার টাকার দায় নেবে না। আপনি যদি মনে করেন যে- আপনি তাদের কাছে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বলে তারা আপনার টাকার দায়িত্ব নেবে- এটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
Loss by the trading app recommendations
আরেকটা হচ্ছে মোবাইলে ট্রেডিং করার জন্য যে মোবাইল অ্যাপ বা ব্রোকিং ফার্মের যেসব অ্যাপ / মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা ট্রেডিং করি, যার মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করা হয় এবং প্রায় প্রত্যেকটা অ্যাপেই রোজ কিছু না কিছু শেয়ার কেনার Recommendation বা Advice আসে।
প্রতিদিন প্রচুর শেয়ার কেনার Recommendation বা Advice আসতেই থাকে এবং অনেকেই মনে করেন যে বা যাঁরা Recommendation বা Advice পাঠাচ্ছেন খুব নিশ্চিত হয়ে, খুব গভীর গবেষণা করে পাঠাচ্ছেন, অতএব এটা কিনে ফেলা যায় এবং এটা কিনলে একদম পারফেক্ট ট্রেড হবে ও প্রচুর লাভ আসবে। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ সেরকম নাও হতে পারে। আমি নিজে দেখেছি যে বড় বড় বিভিন্ন ইকোনমিক নিউজ পেপারগুলোতে যা শেয়ার কেনাবেচা করার Recommendation বা Advice বেরোয় তাদেরও ৫০% ঠিক হয়, কখনো মেলে কখনো মেলে না।
ওগুলোকে অতো ১০০% সঠিক ভেবে নেবেন না, ওদের কাজ হচ্ছে রোজ এগুলো পাঠানো ওদের কাস্টমারদের কাছে, লোকেদের নতুন নতুন ইনফরমেশন দেবার জন্য।
শুধু ব্রোকিং ফার্ম কেন, বড় বড় যে বিভিন্ন ইকোনমিক নিউজগুলো আসে, নিউজ চ্যানেল, নিউজ পেপার এসব মারফৎ, তাদেরও প্রেডিকশন কখনো মেলে আবার কখনো মেলে না। গড়ে ৫০% সঠিক। সেগুলো দেখে ট্রেড করতে গেলেও কিন্তু আপনারও লোকসানের সম্ভাবনা ৫০% অতএব ওগুলোকে ১০০% সঠিক ভেবে নেবেন না। ওদের কাজই হচ্ছে এগুলো পাঠানো লোকেদের কাছে, যাতে তাদের বেশি সংখ্যক কাস্টমার হয়। কারণ নতুন নতুন ইনফরমেশন দিলে, লোকেরা উৎসাহিত হবে।
Loss in share market due to lack of trading knowledge
এবার যেটা বলছি সেটা একটা অন্যরকম লোকসানের ব্যাপার। সেটা হচ্ছে যখন শেয়ারটা কেনা হয়েছিল তখন অনেক হাই বা বেশি দাম ছিল।
এখন শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। কিন্তু যখন দাম পড়ছে, তখন, সেই অবস্থায় ক্যাপিটাল বাঁচাবার কৌশল জানেন না বলে অনেকে কিন্তু শেয়ারবাজারে লোকসান করেন। আসলে বিভিন্ন ট্রেডিং টেকনিক না জানার কারণে এইসব লোকসান হয়। যখন ক্রমাগত দাম পড়ে যাচ্ছে, তখন ফিউচার বা অপশন ট্রেডিং করে কিন্তু ক্যাপিটাল অনেকটা বাঁচিয়ে দেওয়া যায়। এরকম অনেক পদ্ধতি আছে, কিন্তু সেগুলো অনেকেই জানেন না। এটা আসলে লোকেদের না জানার জন্য লোকসান। অনেকেই ভাবেন যে দামটা পড়ে গেছে, অপেক্ষা করি দামটা আবার বাড়বে।
তাঁরা আশা করে থাকেন যে দামটা আগামী দিনে দামটা আরো বাড়বে, কিন্তু সেটা নাও হতে পারে বরং দামটা আরো বেশি করে পড়েও যেতে পারে। সুতরাং শেয়ার কেনার সময় সেটা কিন্তু আমাদের ভেবে রাখতে হবে দামটা পড়ে গেলে আমি কি করবো । অনেক সময় দেখা গেছে শেয়ারের দাম ৯০% বা আরো বেশি পড়ে গেছে। যেমন ধরুন পিসি জুয়েলার্স, দেওয়ান হাউসিং ফিনান্স, ইন্ডিয়াবুলস হাউসিং ফিনান্স, ইয়েস ব্যাঙ্ক এদের সকলেরই প্রায় ৯০ শতাংশের ওপরে দাম পড়ে গেছে।
কিন্তু শেয়ারের দাম যখন পড়ে যাচ্ছিল, তখন কিন্তু আপনারা ক্যাপিটাল বাঁচাতে পারতেন যদি আপনারা ট্রেডিং টেকনিকগুলি ঠিকঠাক জানতেন। কিন্তু বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরাই কিন্তু এসব টেকনিক জানেন না ও তার জন্য কিন্তু বহু টাকা লস করেন। অতএব শেয়ারবাজারে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন আপনি যতটুকু টাকা ইনভেস্ট করতে চান, জেনে বুঝে করুন।
যদি আপনি ডেইলি ট্রেডিং করতে চান বা শুধু ডেলিভারিতে কেনাবেচা করতে চাইলেও কিন্তু অনেক কিছু শেখার আছে। না হলে কিন্তু লস হবার অনেক সম্ভাবনা আছে।
যদি শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করার জন্য হেল্প চান তাহলে আমাদের ফোন করতে পারেন আমাদের নাম্বার হল (ভারত) ৯১৬৩১১১৩৯০। শেয়ার ট্রেডিং শিখতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন